স্বদেশ ডেস্ক:
আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে তালেবানের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে চলা আফগান যুদ্ধের অবসানে কাতারের মধ্যস্থতায় এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং তালেবান নেতাদের উপস্থিতিতে এই চুক্তি সই হয়। খবর : আলজাজিরা ও বিবিসির।
চুক্তি হওয়ায় এখন আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠায় দেশটির সরকারের সাথে আলোচনা চালিয়ে যাবে তালেবান। চুক্তি অনুযায়ী, তালেবান শর্ত মেনে চললে আগামী ১৪ মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহার করবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটো মিত্ররা। অন্য দিকে আফগানিস্তানে আর কোনো হামলা চালাবে না তালেবান। তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে আল কায়েদাকে কোনো তৎপরতা চালাতে না দেয়ারও অঙ্গীকার করেছে তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ বলা হয় আফগান সঙ্ঘাতকে। এই যুদ্ধ অবসানের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দোহায় যান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ওয়াশিংটন থেকে দোহায় নেমে কাতারের আমিরের সাথে বৈঠক করেন তিনি। চুক্তি নিয়ে কাবুলে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাস এক টুইট বার্তায় বলেছে, আফগানিস্তানের জন্য স্মরণীয় একটি দিন শনিবার। এই চুক্তির ফলে আফগানিস্তানে মোতায়েনরত সৈন্যদের ধারাবাহিকভাবে প্রত্যাহার করে নেবে যুক্তরাষ্ট্র।
আল কায়েদা ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলা চালানোর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আফগানিস্তানে অভিযান চালায় যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বাহিনী। ১৯ বছরের এই যুদ্ধে কত সংখ্যক আফগান বেসামরিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও তালেবান সদস্যের প্রাণ গেছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান বের করাটা কঠিন। তবে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসঙ্ঘের এক প্রতিবেদন মতে এই যুদ্ধে ৩২ হাজারের বেশি সাধারণ নাগরিক নিহত হয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ডের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ওয়াটসন ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, আফগান যুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর ৫৮ হাজার সদস্য এবং বিরোধী পক্ষের ৪২ হাজার যোদ্ধা নিহত হয়েছে।
অপর দিকে আফগানিস্তানে অভিযানের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক যৌথ বাহিনীর প্রায় সাড়ে তিন হাজার সৈন্য নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে দুই হাজার ৪০০ এর বেশি যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। তাদের তথ্য অনুযায়ী, ১২ হাজারের মতো বিদেশি সৈন্য এখনো আফগানিস্তানে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধের সমাপ্তি টানার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
২০১১ সাল থেকে আফগানিস্তানে শান্তি নিয়ে আলোচনা করতে আসা তালেবান নেতাদের আশ্রয় দিয়েছে কাতার। ২০১৩ সালে যেখানে তালেবানের একটি কার্যালয় চালু করা হয়, তবে পতাকা নিয়ে বিরোধে সেই বছরই সেটা বন্ধ করে দেয়া হয়।
২০১৮ সালে তালেবান ঘোষণা করে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে বসবে যাতে শান্তির একটি রোডম্যাপ তৈরি করা যায়। কিন্তু তারা আফগান সরকারের সাথে কোনো আলোচনায় বসতে অস্বীকার করে, যাদের তারা আমেরিকার পুতুল বলে বর্ণনা করে। কাতারে ৯ দফা আলাপ-আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান একটি চুক্তিতে সম্মত হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ সপ্তাহের মধ্যে ৫৪০০ সেনা সরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান আলোচক। কিন্তু কয়েক দিন পরে তালেবানের হামলায় একজন মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার পর আলোচনাকে ‘মৃত’ ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পর্দার আড়ালে উভয়পক্ষ আবার আলোচনা শুরু করে। এক সপ্তাহ আগে সহিংসতা কমানোর ব্যাপারে সম্মত হয় তালেবান। যদিও আফগান কর্মকর্তারা জানান, এই সময়ের মধ্যেই তাদের হামলায় ২২ জন সৈন্য এবং ১৪ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে।
এ দিকে চুক্তিতে বিভিন্ন ধরনের জটিলতার শঙ্কায় এটি দীর্ঘস্থায়ী হবে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন অনেকে।